উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের (এটিইও) দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে কেন উন্নীত করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক ও গণ-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তোফায়েল আহমেদ ও বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ মিলন মিয়া।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (৪ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারির এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন দোলন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট তোফায়েল আহমেদ।
গত ১৭ জুলাই ৮৫২ জন এটিইও পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন অ্যাডভোকেট তোফায়েল আহমেদ। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন আদালত। জানা গেছে, দেশে এটিইও পদ আছে ২৬০৭টি।
গত দুই দশক ধরে এটিইওরা তাদের পদটিকে নবম গ্রেড করার দাবি করে এলেও কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়ে আসছে। তাই এবার নবম গ্রেড বাস্তবায়নে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অ্যাসোসিয়েশন সারাদেশে যৌক্তিক আন্দোলনসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করে এসেছে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরাবরসহ বিভিন্ন দফতরে এ সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদন ও স্মারক লিপি দেওয়া হয়।
বিভিন্ন সময়ে, মানববন্ধন ও আন্দোলন সংগ্রাম করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে রিটকারী এটিইওদের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ মিলনা মিয়া অ্যান্ড গং ২৯ জুন সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিট আবেদন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সব উপজেলায় ২৬০৭ টি এটিইও পদের বিপরীতে বর্তমানে এক হাজার ৮০০ জন এটিইও কর্মরত আছেন। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ পরিসরে মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নসহ সরকারের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসনকে বিভিন্ন কাজে এটিইওরা সহযোগিতা করে আসছেন। করোনাকালে এসব কর্মকর্তা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে সাধারণ মানুষের সেবায় নিয়োজিত থেকে প্রশংসা পেয়েছেন।
এছাড়া অতি-দরিদ্রদের মধ্যে ভিজিডির চাল, টিসিবি, কর্ম-সিজন কর্মসূচিসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে ট্যাগ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি, বিদ্যালয় উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন (স্লিপ), রুটিন মেইনটেন্যান্স, ক্ষুদ্র মেরামত, ভবন ও ওয়াশব্লক নির্মাণ কাজ তদারকিসহ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ), এপিএসসি বাস্তবায়নে এটিইওরা কাজ করেন।
১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পিটিআইয়ের ইন্সট্রাক্টর পদটি তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও পিটিআইয়ের সুপার পদটি নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর পদটি প্রকল্প থেকে নবম গ্রেড রাজস্বখাতে, প্রধান শিক্ষকদের ১৬ গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেড, সহকারী শিক্ষকদের ১৮তম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও পিএসসি কর্তৃক রাজস্বখাতে নিয়োগপ্রাপ্ত এটিইও পদটির গ্রেড উন্নয়ন হয়নি।
অথচ এটিইও পদটি ১৯৯৪ সাল থেকে অদ্যাবধি দ্বিতীয় শ্রেণিতে রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মাঠ পর্যায়ের এসব কর্মকর্তা কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত থাকায় দাপ্তরিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে পদ মর্যাদাগত বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আবার নবম গ্রেড না পাওয়ায় কর্মস্পৃহা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষায় সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার এটিইওরা। তাই, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড রায় দেওয়ার পর নিজেদের মর্যাদা রক্ষায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নবম গ্রেড বাস্তবায়নে দেন দরবারের পাশাপাশি মামলাসহ কঠোর কর্মসূচির দিকে আসেন।কার্টেসী : জাগো নিউজ