1. monoarulhasanmanik@gmail.com : দৈনিক প্রাথমিক শিক্ষা বার্তা : দৈনিক প্রাথমিক শিক্ষা বার্তা
  2. info@www.prathomikshikshabarta.com : দৈনিক প্রাথমিক শিক্ষা বার্তা :
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা স্মার্টফোনে পাবেন যেভাবে/How to get earthquake warnings on your smartphone কিডনি ভালো রাখতে এই ৫ খাবার খান/Eat these 5 foods to keep your kidneys healthy. নতুন বেতন কাঠামোর রূপরেখা নিয়ে সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে কমিশন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দিতে মন্ত্রণালয়ের চিঠি/Ministry’s letter to pay primary assistant teachers’ salaries in 11th grade পে স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে সর্বশেষ যা জানা গেল/Latest news on pay scale implementation সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার /Financial advisor urges government officials and employees to be patient স্কুল-কলেজের সভাপতির দায়িত্বে ইউএনও-ডিসি/UNO-DC takes charge of school and college presidents পে স্কেলের গেজেট না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি সরকারি কর্মচারীদের/Government employees warn of tough agitation if pay scale gazette is not issued আগামীকাল থেকে প্রাইমারিতে ‘স্কুল ফিডিং’ শুরু, প্রতিদিনই ভিন্ন খাবার/’School feeding’ starts in primary schools from tomorrow, different food every day ৫০০-তে বাংলাদেশের তৃতীয় তাইজুল/Bangladesh’s third Taijul in 500

প্রাথমিক শিক্ষায় ভাষাদক্ষতা বিকাশের পথে বাধা কোথায়/What are the obstacles to developing language skills in primary education?

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫
  • ২৬৪ বার পড়া হয়েছে
প্রাথমিক শিক্ষায় ভাষাদক্ষতা বিকাশের পথে বাধা কোথায়/What are the obstacles to developing language skills in primary education?

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি কারণ হলো তার ভাষা আছে। এ ভাষায় সে কথা বলতে পারে। ভাষা দিয়ে সে তার নিজেকে অন্যের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়, তাকে কাছে টানে।

ভাষা আছে বলেই মানুষ চিন্তা করতে পারে। শিশুদের মধ্যে শূন্য থেকে ৩৬ মাস বয়স পর্যন্ত মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। আর ১০ বছরের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার মতো জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতা গড়ে ওঠে। আর সব রকমের দক্ষতার সঙ্গেই ভাষাদক্ষতা–সম্পর্কিত। কোনো শিশুর যোগাযোগ ও বিকাশের ক্ষমতার জন্য ভাষাদক্ষতা অপরিহার্য। ভাষাদক্ষতা দুই রকমের, একটি গ্রহণমূলক বা রিসেপটিভ স্কিলস যেখানে শোনা এবং পড়া থাকে। অন্যটি প্রকাশমূলক বা প্রোডাক্টিভ স্কিলস যেখানে বলা ও লেখা থাকে। অর্থাৎ শোনা, বলা, পড়া লেখা, এ চারটিই ভাষাদক্ষতা।

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। পড়াশোনার প্রধান মাধ্যমও বাংলা; কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের শিশুরা (অধিকাংশ) প্রাথমিক স্তর শেষে বাংলা ভালোভাবে পড়তে পারে না। অনেক গবেষণায় তা উঠে এসেছে এবং এ হার অত্যন্ত উদ্বেগের। শিশুদের বিশেষ করে প্রাথমিকের পাঁচ–ছয় বছরের শিক্ষা শেষে বাংলা পড়তে না পারার পেছনের অন্তরায়গুলো চিহ্নিত এবং সে আলোকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সব ধরনের শিক্ষাই ব্যাহত হবে এবং হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা কেবল শিক্ষার্থী, শিক্ষকের বিষয় নয়। এতে জড়িত সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, পাঠ্যপুস্তক, প্রশিক্ষণ, সমাজ ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা।
প্রথমেই বলতে হয় শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারকে খুব গুরুত্ব দিতে দেখা যায় না। যে কারণে এ খাতে বাজেট কম থাকে, কোনো গবেষণার তেমন সুযোগও থাকে না। নীতিগতভাবে অনেকেই মনে করেন (সবাই নয়) বাংলা ভাষা আসলে শেখার মতো কোনো বিষয় নয়। কারণ, এটা যেহেতু মাতৃভাষা, জন্মের পর থেকে শিশুরা এমনি এমনি শিখে যায়। এ জন্য শিক্ষকদেরও খুব বেশি জানার দরকার নেই; বরং ইংরেজি শেখা উচিত ভালো করে। এ মনস্তত্ত্বের ওপর নির্ভর করে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চলে। ফলে বাংলা ভাষা হয়ে পড়ে গুরুত্বহীন। তার প্রভাব পড়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর। কেবল যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেই নয়, ভাষা একটি শিল্পও। উন্নত দেশে শিশুদের পড়ানো হয় ল্যাঙ্গুয়েজ অব আর্ট। এখানে ভাষার নান্দনিকতা, প্রমিত উচ্চারণ, স্বরভঙ্গি, শব্দ ও বাক্যের নানামুখী প্রয়োগ থাকে আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে।

আমাদের এখানে গতানুগতিক পড়ালেখা হয়। যাঁরা শেখাবেন, সেই শিক্ষকদেরও ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান থাকে অপর্যাপ্ত। তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভাষাদক্ষতা বাড়ানো যায়।
আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর অবশ্য বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। তবে সেটি খুবই অপ্রতুল। কয়েক বছর পরপর একবার বা দুবার ছয় দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণকে আরও কার্যকর এবং বেশি পরিমাণে করা প্রয়োজন। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ভাষাদক্ষতায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। প্রাথমিক স্কুলে শিশুরা সাধারণত পাঁচ–ছয় বছর বয়সে ভর্তি হয়।

এ বয়সী শিশুদের শব্দভান্ডার থাকার কথা ১০০০ থেকে ২০০০ শব্দের মধ্যে। বেশির ভাগ শব্দই থাকে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত। এ ব্যবহৃত শব্দগুলো থাকার কথা পাঠ্যপুস্তকে; কিন্তু আমাদের প্রথম শ্রেণির বইগুলোতে বর্ণ পরিচয়ের পাশাপাশি যথেষ্ট সংখ্যক শব্দ থাকে না। যেমন ক বর্ণের পরিচিতির সঙ্গে শব্দ দেওয়া হয়েছে ‘কল’। এখানে শব্দভান্ডার বাড়ানোর জন্য আরও কিছু শব্দ যেমন কলা, কাক, কান, কলম, কমলা দেওয়া যেত।
সঠিকভাবে প্রথম শ্রেণির বই শেখাতে পারলে শিক্ষার্থীদের এক বছরেই রিডিং পড়তে পারার কথা। কেননা, পড়তে পারার আগে এবং পড়ার সময়ের প্রচেষ্টাকেই পড়তে শেখা বলে। যেমন ধ্বনি ও বর্ণ চিহ্নিত করতে পারা, কার চিহ্ন ও ফলা চিহ্নের ব্যবহার জানা, শব্দাংশ শব্দ পড়া ইত্যাদি। প্রথম শ্রেণিতে শিশু সহজ বাক্য পড়তে পারার কথা।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে শিশু পড়তে শিখবে। এ ক্ষেত্রে পড়ার পাঁচটি উপাদানের মধ্যে ধ্বনি সচেতনতা, বর্ণজ্ঞান ও শব্দজ্ঞান সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে পারবে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে এসে পড়ার বাকি উপাদান পঠন সাবলীলতা ও বোধগম্যতা অর্জন করবে এবং স্বাধীন পাঠকে পরিণত হবে; কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, প্রথম শ্রেণির ৩২ শতাংশ এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী একটি বাংলা শব্দও পড়তে পারে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকদের একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বারবার অনুশীলন করাতে হবে। শিক্ষককে হতে হবে আরও আন্তরিক।

আর বেশি পরিশ্রমের জন্য সরকারের উচিত শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বাড়ানো এবং বেশি বেশি যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। বর্তমান দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আবার বর্ণ পরিচিতি দেওয়া হয়েছে, যেটাতে শিক্ষার্থীরা না পড়তে পারার অজুহাতের অবকাশ রয়েছে। যেখানে প্রথম শ্রেণি পড়ার পরে শিশু রিডিং পড়তে পারার কথা, সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বর্ণ দেওয়া মানে জায়েজ করা হলো—এক বছর শেখানোর পরেও শিশু বর্ণ না–ও শিখতে পারে। আর এই অজুহাতের সুযোগ নেন শিক্ষকেরা। আরেকটা খারাপ দিক হলো ‘নমনীয় পাস’ দেওয়া। যে শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে পাঠ সম্পূর্ণ করতে পারবে না, প্রয়োজনে সে আবার ওই শ্রেণিতে থাকবে। এতে লজ্জার কিছু নেই; কিন্তু তাকে না শিখিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দিয়ে বরং শিক্ষার্থীর আরও ক্ষতি করা হয়।

ভাষা শেখার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছোটবেলায় শিখেছি ভাষাকে সুন্দর, শুদ্ধভাবে বলতে, পড়তে ও লিখতে হলে ব্যাকরণ জানতে হয়। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় সরাসরি ব্যাকরণ শেখানো হয় না। এর কারণ হিসেবে বলা হয় ব্যাকরণ কঠিন, তাই তাকে প্রত্যক্ষভাবে না শিখিয়ে পরোক্ষভাবে শেখাতে হবে। কিন্তু ব্যাকরণ খণ্ডিতভাবে ধারাবাহিকতা না রেখে শেখানো যায় না। আর শেখালেও শিশুরা এর প্রয়োগ বুঝতে পারে না। তাই তৃতীয় শ্রেণি থেকেই ব্যাকরণ আলাদা করেই শেখানো উচিত। গবেষণার মাধ্যমে কঠিন বিষয়কে সহজ ও আনন্দদায়ক করা যায়। এখানে প্রাথমিক শিক্ষকসহ আরও শিক্ষাবিদদের যুক্ত করা যেতে পারে।

পড়তে শেখার পরের ধাপই হলো পড়ে শেখা। পড়ে শেখার ভিত্তি হলো লিখিত ভাষা। তাই শিশুকে ভাষাচর্চা করানোর জন্য বেশি বেশি বই পড়তে দিতে হবে । তৃতীয় শ্রেণি থেকে বাংলা বইয়ের পাশাপাশি আরেকটি বাংলা সহপাঠ দেওয়া যেতে পারে। যেটায় থাকবে মজার, নৈতিক, অনুসন্ধানমূলক গল্প বা পাঠ। এতে ভাষা শেখাও হবে, বই পড়ার প্রতি আগ্রহও বাড়বে। বিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে বির্তক অনুষ্ঠান, গল্প বলা বা লেখার। অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।

অভিভাবকের সঙ্গে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সরাসরি যোগাযোগ থাকা দরকার। স্কুল পর্যায়ে মা সমাবেশ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উপরোক্ত কাজগুলো সবাই সব ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে করলে প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীরা সহজেই পড়তে শিখবে এবং পড়ে শিখবে। ‘পড়ে শেখা’ শিক্ষার্থীকে স্বাধীন ও সাবলীল পাঠকে পরিণত করবে।

সামাজিক মাধ্যমে ইংরেজি শেখার কলাকৌশল যতটা আগ্রহ নিয়ে প্রচার করা হয়, সে তুলনায় বাংলা ভাষাকে তত বেশি এড়িয়ে যাওয়া হয়। আমাদের নতুন প্রজন্ম বাংলা ভাষার ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্যকে ধারণ করতে পারছে না; ফলে তাদের অনেকেই শুদ্ধ প্রমিত উচ্চারণে কথা বলতে পারে না। পৃথিবীর সুন্দরতম জীবন্ত ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা অন্যতম। তাই প্রাথমিক স্তর থেকেই এই ভাষাদক্ষতা শেখানোর প্রতি সবাইকেই যত্নশীল হতে হবে।

তাসনীম চৌধুরী
সহকারী শিক্ষক, দক্ষিণ বাড়ন্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌলভীবাজার।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট