দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি প্রধান শিক্ষক পদে পদায়নের পাশাপাশি নতুন নিয়োগেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে এ নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্কুলগুলোয় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কীভাবে যোগ্যদের নিয়ে আসা যায়, সে বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে। কয়েকটি শ্রেণি করে দিতে হবে। যাঁরা বহু বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন ও অভিজ্ঞ, তাঁরা প্রাধান্য পাবেন। এর পাশাপাশি তরুণদেরও প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুযোগ দিতে হবে। এই নিয়োগের প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে সমন্বয় করে অতি দ্রুত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্নের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে নীতিমালায় পরিবর্তন আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অনেক সময় এক উপজেলায় নিয়োগ পেয়ে পরে অন্য উপজেলা ও শহরের কাছে কোনো স্কুলে শিক্ষকেরা বদলির জন্য চেষ্টা করেন। তাঁরা সুপারিশ ও তদবির নিয়ে বিভিন্ন মহলে ঘোরেন। এ ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা ও প্রক্রিয়া থাকতে হবে। কেবল ওই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তিনি বদলি হতে পারবেন।
স্কুলগুলোয় মেয়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো নারীবান্ধব কি না, এসব বিষয়েও জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, স্কুলের ভবন নির্মাণের সময় কমিটিতে অন্তত একজন নারী স্থপতি রাখতে হবে, যাতে নারীবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ হয়। পরিকল্পনায়, চিন্তায় ও বাস্তবায়নে নারীদের বিষয় আলাদা করে গুরুত্ব দিতে হবে এবং সব ব্যবস্থা রাখতে হবে।
দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে ইন্টারনেট সংযোগ ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ তৈরির বিষয়েও জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান সম্পর্কে ও কোন বিদ্যালয়গুলো ভালো করছে, সে ব্যাপারে মূল্যায়ন জানতে চান।
বৈঠকে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে। কিন্তু মূল যে উদ্দেশ্য—শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সেটি হয়নি। আমরা মূল্যায়ন করে স্কুলগুলোকে র্যাঙ্কিং করছি। যেসব স্কুলের শিশুরা পিছিয়ে আছে, তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিচ্ছি।’
বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানান, মূল্যায়নে দেখা গেছে, যেসব স্কুলের মান ভালো, সেখানে প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতা ও তাঁর সঙ্গে অন্য সহকর্মীদের সম্পর্ক ও ব্যবহার বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।
প্রধান শিক্ষক পদে শূন্য পদ পূরণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।