প্রায় ৩০ বছর আগে দিনাজপুর থেকে ঢাকায় আসি। তখন থেকেই দিনমজুরি করি। গাবতলী বালুর ঘাটে ইট, বালু ও পাথর টানার কাজ। আট ওড়া (টুকরি) বালু বহন করলে কখনো ২০ টাকা, আবার কখনো ৪০ টাকা দেয়। একেকটি ওড়ায় ৪০ থেকে ৪৫ কেজি ধরে। শরীর ভালো থাকলে কোনো দিন এক হাজার টাকাও কামাই (আয়) করা যায়। মাঝেমধ্যে শরীর ভালো না থাকলে ৩০০–৪০০ টাকা আয় হয়। মাসে আয় হয় ১৩ থেকে ১৮ হাজার টাকা।
ঢাকায় যখন প্রথম আসি তখন ১৫০ টাকার ঘর ভাড়ায় থাকতাম। এখন ঘরভাড়া দুই হাজার টাকা। সময়ের সঙ্গে খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি আয়ও বেড়েছে। কিন্তু জীবনের উন্নতি হয়নি। এখনো আগের মতোই বাজারে গেলে ইচ্ছেমতো সব কিনতে পারি না। বাজারে ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে তেল, চাল ও ডাল কেনার পর আর কিছু কেনার সুযোগ থাকে না। এখন তো আধা কেজি গরুর মাংস কিনতে গেলেও ৩৫০ টাকা লাগে। একদিকে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে, অন্যদিকে বয়স বাড়ায় আগের মতো খাটতে পারি না।
কয়েক বছর আগেও ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনেছি। এখন মোটা চাল ৬২ টাকা কেজি। ঢাকায় একা থাকি। তাতেও নিজের থাকাখাওয়াসহ মাসে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। বাড়িতে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা পাঠানোর চেষ্টা করি। বয়স এখন ৫০–এর কাছাকাছি। আগের মতো শরীরে জোর পাই না। অনেক ওজন বহন করতে হয়। প্রায়ই ঘাড় ও কোমরে ব্যথা হয়। তাই মাসে ২০ দিনের কমবেশি কাজ করতে পারি।
কয়েক মাস আগে পায়ে ব্যথা পেয়েছি। প্রায় তিন মাস বেকার ছিলাম। সরকারি হাসপাতালে গেলেও নিজের টাকায় বেশির ভাগ ওষুধ কিনতে হয়েছে। তাই আমাদের মতো গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য সরকার যদি বাজেটে কোনো সুবিধা রাখে, তাহলে খুব ভালো হয়।
ঢাকায় কোনো স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় টিসিবির পরিবার কার্ড পাইনি। সারা দিন মাল টানি বলে টিসিবির চাল ও অন্যান্য পণ্য কেনার লাইনে দাঁড়ানোর সময় পাই না। তাই আমাদের মতো শ্রমিকদের জন্য আলাদা কার্ডের ব্যবস্থা করলে কম টাকায় খাবার কিনে খেতে পারতাম।
আগেও কোনো সরকারের আমলে বাজেটে কোনো প্রত্যাশা ছিল না। এবারও নেই। শুধু একটাই আশা, আমরা যেন বাজারে গিয়ে কম দামে চাল–ডালসহ খাবার কিনতে পারি। আর হাসপাতালে গিয়ে কম দামে ওষুধ ও চিকিৎসা পাই।
আমি চাই, সরকার যেন আমাদের মতো দিনমজুরদের সুদ ছাড়া ঋণ বা ভাতা দেয়। তাহলে হয়তো গ্রামে একটা গরু কিনতাম, আর একটা মুদিদোকান দিতাম। তাহলে গ্রামে চলে গিয়ে পরিবারের নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারতাম।
হেলাল উদ্দিন, দিনমজুর, গাবতলী বালুর ঘাট, ঢাকা।সূত্রঃপ্রথমআলো