
বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক পরিস্থিতিতে যৌতুক দাবি নিয়ে মামলার সময় কী ধরনের প্রমাণ জমা রাখতে হয় এবং কখন মামলা করা উচিত—এ নিয়ে ব্যারিস্টার লিমা আঞ্জুমান একটি ভিডিওবার্তায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানান, অভিযোগের ধরন, সাক্ষীর উপস্থিতি, মেয়াদ-সংক্রান্ত বাস্তবতা ও বিবাহবিচ্ছেদ (ডিভোর্স) ইত্যাদি বিষয় কোর্টে মামলার গ্রহণযোগ্যতায় সরাসরি প্রভাব ফেলে।
বৈধ দৃষ্টিকোণ থেকে লিমা আঞ্জুমান যে প্রধান বিষয়গুলো জোর দিয়ে বলেছেন, সেগুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপ—
যৌতুকের অপরাধ কখন সংঘটিত বলে গণ্য হবে
আইনগতভাবে কোনো স্বীকারোক্তি বা চাহিদা আসলেই ‘কজ-অফ-অ্যাকশন’ জন্ম নেয়—অর্থাৎ সেই মুহূর্ত থেকেই যৌতুক দাবি করা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই চাহিদা ব্যক্তিগত ও অটুট পরিবেশে (বদ্ধ কক্ষে, পরিবারের ভেতরে) ঘটে বলে বাইরের সাধারণ সাক্ষীর উপস্থিতি হয় না।
সাক্ষীর ব্যাপারটি কেমন হবে
বাইরের অনাগত মানুষকে সাধারণত সাক্ষী করা কঠিন—কারণ অভিযোগটি পারিবারিক বা ব্যক্তিগত পরিবেশে হয়। তাই মামলায় মূলত পরিবারের সদস্যরাই (অভিযোগকারী, তার বাবা-মা বা নিকট আত্মীয়) সাক্ষী হিসেবে বিবেচিত হয়। এজন্য অভিযোগ দাখিল যত দ্রুত হবে, কোর্টের কাছে তা ততই বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে।
কত দ্রুত মামলা করা উচিত—সময়সীমা আছে কি না
আইনে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা দেওয়া নেই—যাহোক বিচারক বাস্তবধর্মী দিকটি বিবেচনা করেন। দীর্ঘ দিনের বিরতি থাকলে (যেমন রাগ করে অনেক মাস পরে মামলা) বিচারক সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন যে অভিযোগকারীকে বিভিন্ন প্রভাব বা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাই ঘটনা ঘটার পর যত দ্রুত সম্ভব মামলা দাখিল করাই সুপরামর্শ।
বিবাহবিচ্ছেদ হলে মামলা করা যাবে না?
যদি অভিযোগকারীর স্বামী ঘটনার পরে তাকে ডিভোর্স করে ফেলে এবং ডিভোর্সের নোটিশ পৌঁছে গেলে তখন যৌতুক মামলা টেকানো কঠিন হয়ে পড়ে—কোর্ট সাধারণত তখন মামলাটি গ্রহণযোগ্যতা মূল্যায়ন করতে ঝুঁকবে না। এজন্য ডিভোর্স নোটিশ পাঠানোর আগেই (যদি সম্ভব) মামলা দাখিল করা উত্তম।
মামলার উদ্দেশ্য ও ফলাফল
যৌতুক মামলা করার লক্ষ্য হলে দু’ধরনের ফল ঘটতে পারে—১) পক্ষ দু’জনে আপস করে, স্বামী হলফনামায় স্বীকার করবে আর যৌতুক চাইবে না; নইলে ২) আদালত প্রয়োজনীয় শাস্তি অনুকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, যা সাজা বা জরিমানা পর্যন্ত যেতে পারে।
আইনজীবীর পরামর্শ
ভালভাবে বুঝে-শুনে মামলাটি করা উচিত—বিশেষত সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, তৎক্ষণাৎ মামলা দাখিল ও ডিভোর্স-নোটিশ-সংক্রান্ত সতর্কতা বজায় রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি ঘটনার শতভাগ সত্যতা তুলে ধরতে চাইলে দ্রুত স্থানীয় আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে মামলা কোর্টে স্থায়ীভাবে টিকে থাকতে পারে।