এবারের এইচএসসির ফলাফল অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে তিন কলেজ থেকে কেউ পাস করেননি, সে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষক বেশি। একটি প্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থী কেবল ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
একজনও পাস না করা ওই তিন কলেজ থেকে মোট ২১ জন শিক্ষার্থী এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। কলেজগুলোতে অতিথি শিক্ষকসহ ২১ জনের বেশি শিক্ষক পাঠদান করেন।
অর্থাৎ শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূলত মাধ্যমিকে বেশ শিক্ষার্থী থাকে। একই প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হন না বলে অনেকটা জোর করে কিংবা কৌশলে শিক্ষার্থী আনা হয়। আর এতেই তাদের দিতে হচ্ছে খেসারত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কলেজ পরিচালনা করতে গিয়ে যে ব্যয় হয়, তার ছিটেফোঁটাও উঠে আসে না শিক্ষার্থীদের বেতন-ভাতা থেকে। বরং প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যালয় শাখা থেকে যে আয় হয়, সেটা থেকেই বেতন পরিশোধ করা হয় কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের। সারা দেশে স্কুলের সঙ্গে কলেজ রাখার যে সুযোগ দেয় সরকার, তারই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চ মাধ্যমিক খোলা হচ্ছে। এতে কাগজে-কলমে মর্যাদা বাড়লেও প্রতিষ্ঠানগুলো কলেজপর্যায়ে সুবিধা করতে পারছে না।
বরং এর প্রভাব পড়ছে মাধ্যমিকেও।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার প্রায় ৫২ শতাংশ। তবে জেলার বিজয়নগর ও নবীনগর উপজেলার তিনটি কলেজের কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেননি। অকৃতকার্য হওয়া তিন কলেজের মধ্যে দুইটি থেকে এবারই প্রথম এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন পরীক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জেলার ৯টি উপজেলা থেকে ১২ হাজার ৬১২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছেন ছয় হাজার ৫৩৩ জন। অকৃতকার্য হয়েছেন ছয় হাজার ৭৯ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২৮৫ জন।
এর মধ্যে জেলার বিজয়নগর উপজেলার নিদারাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে অংশ নেওয়া ছয়জন পরীক্ষার্থীর সবাই অকৃতকার্য হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন ব্যবসায় শিক্ষা এবং বাকিরা মানবিক শাখার শিক্ষার্থী। একই উপজেলার চাঁনপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে অংশ নেওয়া ১১ জন পরীক্ষার্থীর কেউই পাস করতে পারেননি। তারা প্রত্যেকেই মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। এ দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেন। এছাড়া নবীনগর উপজেলার জিনোদপুর ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকেও অংশ নেওয়া চার পরীক্ষার্থীর কেউ পাশ করেননি। এ প্রতিষ্ঠানে চলতি বছর এইচএসসিতে ভর্তির জন্য কেউ আবেদনও করেননি।
নবীনগর জিনোদপুর ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থী গত বছর ইংরেজিতে ফেল করেন। এবার সেই একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে পারেননি।
জিনোদপুর ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো। কিন্তু কলেজপর্যায়ে কেউ ভর্তি হতে চায় না। আমরা অনেক বুঝিয়ে কয়েকজনকে ভর্তি করাই। কলেজে তিনজন নিয়মিত শিক্ষক ও চারজন অতিথি শিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ার অনাগ্রহের কারণে আমরা বিপাকে পড়ি। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির বদনামও হয়েছে। সামনের বছর থেকে যেন এমন না হয়, সে বিষয়ে আমাদের চেষ্টা থাকবে।
নিদারাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নান মোহাম্মদ আজমল বলেন, সব পরীক্ষার্থী ফেল করার ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত। যদিও পরীক্ষা দিয়ে এসে সবাই বলেছিল ভালো ফল করবে। কিন্তু কেন এমন হলো, বুঝতে পারছি না।
কথা হয়, চাঁনপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক শামসুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা এক বছর হলো কলেজের কার্যক্রম শুরু করেছি। তিনজন স্থায়ী শিক্ষকের পাশাপাশি অতিথি শিক্ষকও রয়েছেন। এর পরও ফল খুবই খারাপ হয়েছে, যা আশা করা হয়নি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জুলফিকার হোসেন বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিনটি কলেজ থেকে কেউ পাস করেনি। কেন এমন ফল হলো, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রঃকালের কণ্ঠ