১. অপমান নয়
শিশুর সামনে কাউকে অপমানজনক বা গালিভরা ভাষায় কিছু বলবেন না। এতে শিশু শিখে যায় রূঢ়ভাবে কথা বলাটাই স্বাভাবিক। সে নিজেও পরবর্তীতে সেই রকম ভাষা ব্যবহার করতে পারে।
২. ত’র্ক নয়
পরিবারের কোনো দ্বন্দ্ব বা ঝগড়া শিশুর সামনে করা উচিত নয়। শিশুর মনে এতে অস্থিরতা ও ভয় ঢুকে পড়ে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং সম্পর্ক নিয়ে নেতিবাচক ধারণা গড়ে তোলে।
৩. সত্য বলুন
শিশুদের সামনে মিথ্যা বললে তারা মনে করে মিথ্যা বলা স্বাভাবিক। ফলে তাদের চারিত্রিক গঠনে সততার অভাব দেখা দিতে পারে। সত্য বলা শিখিয়ে দিন ছোটবেলা থেকেই।
৪. সমালোচনা নয়
অন্যের দোষ বা খারাপ দিকগুলো শিশুদের সামনে বেশি বলা উচিত নয়। এতে শিশুদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে এবং তারা অন্যকে মূল্যায়নের বদলে দোষ ধরতে শেখে।
৫. ভয় দেখাবেন না
শিশুদের ভুল করলে ভ’য় দেখিয়ে নয়, বরং ধৈর্য ধরে বুঝিয়ে বলা উচিত। ভয় দেখালে তারা আ’ত্মবি’শ্বাস হারায় এবং নিজের ভুল স্বী’কার করতে ভয় পায়।
৬. অর্থকথা নয়
পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে শিশুর সামনে আলোচনা না করাই ভালো। এতে তাদের মনে দুশ্চিন্তা বা অনিরাপত্তার অনুভব তৈরি হয়, যা মনঃসংযোগ ও বিকাশে বাধা দেয়।
৭. তুলনা নয়
শিশুকে অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করা তাদের আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসে আঘাত করে। প্রত্যেক শিশু আলাদা, তাদের নিজের মতো গড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া উচিত।
৮. গঠনমূলক প্রশংসা
শিশুকে প্রশংসা করুন, তবে সেটা হোক গঠনমূলক ও উৎসাহমূলক। অকারণে বাড়াবাড়ি প্রশংসা করলে তা তাদের বাস্তববোধ কমিয়ে দিতে পারে।
৯. ব্যক্তিগত কথা নয়
দাম্পত্য কলহ বা ব্যক্তিগত গোপন কোনো বিষয় শিশুর সামনে আলোচনা করা ঠিক নয়। এতে তারা মানসিকভাবে চাপ অনুভব করে এবং অপ্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে বিভ্রান্ত হয়।
১০. ভদ্র ভাষা ব্যবহার করুন
আপনার ব্যবহৃত ভাষা যেন সবসময় ভদ্র ও পরিশীলিত হয়। শিশুরা যা শুনে, তাই শেখে। তাই অশ্লী’ল শব্দ ব্যবহার করলে তারাও তা অনুসরণ করতে পারে।
১১. ধর্ম নিয়ে নেতিবাচকতা নয়
শিশুর মনে সব ধর্মের প্রতি সম্মানবোধ গড়ে তুলুন। কোনো ধর্ম নিয়ে নে’তিবাচক মন্ত’ব্য করলে তারা অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে।
১২. নেগেটিভ খবর নয়
খুন, ধর্ষণ বা ভ’য়ংকর কোনো ঘটনা শিশুকে বলা উচিত নয়। এতে তারা আত’ঙ্কিত হয় ও রাতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
১৩. রূপ নিয়ে কটুক্তি নয়
কাউকে কালো, মোটা বা অন্য কোনো বাহ্যি’ক বিষয় নিয়ে উপহাস করবেন না। এতে শিশুর মনেও একই ধরণের বিচারবোধ জন্মায়, যা পরবর্তীতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
১৪. ভুলে রাগ নয়
শিশু ভুল করলে তার ওপর চিৎকার বা শাস্তি না দিয়ে ধৈর্য ধরে বোঝান। এতে তারা নিজের ভুল বুঝতে ও সংশোধন করতে শেখে।
১৫. নিন্দা নয়
অন্য কারো পেছনে সমালোচনা বা নিন্দা করবেন না। শিশুরা মনে করে এটি স্বাভাবিক আচরণ এবং তারা অন্যদের সম্মান করতে শেখে না।
১৬. উপেক্ষা নয়
শিশুর কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। এতে তারা বুঝতে পারে যে তাদের কথা মূল্যবান, যা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
১৭. ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ নয়
শিশুকে শাসনের পরিবর্তে যুক্তি দিয়ে বোঝান। ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করলে তারা শুধু সাময়িকভাবে কথা শুনবে, মনের ভেতর বিদ্রোহ জমবে।
১৮. উপহাস নয়
শিশুর কাজ বা কথা নিয়ে হাসাহাসি করা উচিত নয়। এতে তারা আত্মমর্যাদা হারায় ও নিজেদের প্রকাশে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
১৯. সম্মান শেখান
শিশুকে শেখান, সব শ্রেণি-পেশার মানুষই সম্মানের যোগ্য। গৃ’হকর্মী, রিকশাওয়ালা বা অন্য যেকোনো মানুষকে সম্মান করলে শিশুর মূল্যবোধ উন্নত হয়।
২০. ভালোবাসা থাকুক
আপনার প্রতিটি কথায় যেন মমতা ও সহানুভূতি থাকে। শিশুরা ভালোবাসা থেকেই শেখে এবং মানবিক গুণাবলি অর্জন করে।
শিশুদের সামনে কথাবার্তায় সচেতনতা শুধু একটি অভ্যাস নয়, এটি একটি দায়িত্ব। তারা আমাদের প্রতিচ্ছবি। তাদের সামনে সদাচরণ মানেই আগামী প্রজন্মকে ইতিবাচক ও মানবিক করে গড়ে তোলা। আপনার প্রতিটি ভালো কথা, কোমল আচরণই শিশুর ভবিষ্যতের ভিত্তি মজবুত করে।