1. monoarulhasanmanik@gmail.com : দৈনিক প্রাথমিক শিক্ষা বার্তা : দৈনিক প্রাথমিক শিক্ষা বার্তা
  2. info@www.prathomikshikshabarta.com : দৈনিক প্রাথমিক শিক্ষা বার্তা :
বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ১০:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বন্ধু টাকা ধার চাইছে, সম্পর্ক ঠিক রেখে যেভাবে ‘না’ বলবেন/A friend asks for a loan, how to say ‘no’ while maintaining a healthy relationship জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে/Accountability must be ensured. পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার পরিকল্পনা, মানতে হবে ৩ শর্ত/Paternity leave plan, 3 conditions to be met সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ৪২ ধরনের আয় করমুক্ত, সেগুলো কী?What are the 42 types of income of government officials and employees that are tax-exempt? স্কুলে ছুটি : আসছে নতুন ঘোষণা!School holidays: New announcement coming! প্রাথমিকে বড় নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার /Government to make major appointments in primary সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুসংবাদ/Good news for government employees শুক্রবারের (১৫ ই আগস্ট, ২০২৫) আবহাওয়া পূর্বাভাস/Weather forecast for Friday (August 15, 2025) গারো পাহাড়ে চাষ হচ্ছে ৫০ জাতের বিদেশি আঙুর/50 varieties of foreign grapes are being cultivated in the Garo Hills চার বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস/Heavy rain forecast in four divisions

এইচএসসি পরীক্ষা: বাংলা প্রথম পত্রে ভালো নম্বর পাওয়ার নিয়ম/HSC Exam: Rules for getting good marks in Bangla first paper

  • প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫
  • ৫৮ বার পড়া হয়েছে

 

প্রিয় পরীক্ষার্থী, এইচএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ে ভালো নম্বর পাওয়ার নিয়ম দেওয়া হলো। এ বছরের পরীক্ষা পুনর্বিন্যাসিত সিলেবাসেই হবে। মনে রেখো, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি যেহেতু একটি বিশেষ ধরনের পরীক্ষাপদ্ধতি, এর উত্তর লেখার কৌশলও বিশেষ ধরনের। তাই উত্তর হবে সুনির্দিষ্ট, পরিমিত ও প্রাসঙ্গিক।

  • উত্তর লিখতে হবে ৭টি প্রশ্নের

বাংলা প্রথম পত্রের নির্ধারিত ক-বিভাগে সাতটি গদ্য থেকে চারটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। খ-বিভাগে নির্ধারিত সাতটি কবিতা থেকে তিনটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। গ-বিভাগে সহপাঠ উপন্যাস থেকে দুটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে এবং নাটক থেকে দুটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। মোট প্রশ্ন থাকবে ১১টি।

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে গদ্য থেকে কমপক্ষে দুটি। কবিতা থেকে কমপক্ষে দুটি। উপন্যাস কমপক্ষে একটি। নাটক থেকে কমপক্ষে একটি করে। অন্য আরেকটি প্রশ্নের উত্তর তোমার ইচ্ছেমতো যেকোনো বিভাগ থেকে লিখতে পারবে। সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর মোট সাতটি।
* প্রতিটি উত্তর লিখতে সময় পাবে ১৮ মিনিট

১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে মোট সাতটি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। এ জন্য সময় পাবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ ২১ দশমিক ৪২ মিনিট। এর মধ্যে ১১টি উদ্দীপক পড়তে হবে, ভাবতে হবে, কল্পনা করতে হবে, পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মেলাতে হবে। তারপর তুমি উত্তর লেখা শুরু করতে পারবে। আসল বাস্তবতা হলো, একটি প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য তুমি আসলে কোনোভাবেই ১৭-১৮ মিনিটের বেশি সময় পাবে না। কাজেই সুনির্দিষ্ট ও পরিমিত উত্তর লেখা ছাড়া ভালোভাবে সম্পূর্ণ উত্তর লেখা শেষ করা সম্ভব নয়।

  • বহুনির্বাচনি অংশের প্রশ্ন

বহুনির্বাচনি অংশে নির্ধারিত সাতটি গদ্য থেকে ১২টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, নির্ধারিত সাতটি কবিতা থেকে চার দক্ষতার ১২টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, উপন্যাস (লালসালু) থেকে তিনটি ও নাটক (সিরাজউদ্দৌলা) থেকে তিনটি করে মোট ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার শুরুতেই ৩০ মিনিটে ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট করে দিতে হবে। ওএমআর শিটে প্রশ্নের সেট কোড লিখতে ভুল করা যাবে না।

  • একটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর কীভাবে লিখবে, তা জেনে নাও।

মনে করো, ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা থেকে একটি প্রশ্নের উদ্দীপক:

১। মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ; করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা স্বাধীনচেতা, দুরন্ত, টগবগে এক তরুণ। ১৯৭১ সালে পুরো দেশ উত্তাল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামগঞ্জ, শহর-বন্দর, হাটবাজার জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। নৃশংসভাবে হত্যা করছে নিরস্ত্র-নিরপরাধ মানুষকে। এমন সময় আজাদ যোগ দিলেন ক্র্যাক প্লাটুনে। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন উড়িয়ে দেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযানে সফল হলেন। কিন্তু ৩০ আগস্ট ধরা পড়লেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। সহযোদ্ধাদের তথ্য নেওয়ার জন্য তাঁর ওপর চালানো হলো অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন; কিন্তু মুখ খুললেন না আজাদ, সবকিছু সহ্য করলেন দাঁতে দাঁত কামড়ে। তাঁর মা সাফিয়া বেগম রমনা থানায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলে ভাত খেতে চেয়েছিলেন আজাদ। কিন্তু পরের দিন সাফিয়া খাতুন ভাত নিয়ে গেলে ছেলেকে আর খুঁজে পাননি। ছেলেকে ভাত খাওয়াতে না পারার কষ্টে আজাদের মা সারা জীবন আর ভাত খাননি।

ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?

খ. ‘তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা’—বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

গ. উদ্দীপকের আজাদের মধ্যে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যের যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উক্ত বৈশিষ্ট্যই ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার একমাত্র দিক নয়—মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই করো।

প্রিয় পরীক্ষার্থী, তোমরা মনে রেখো সৃজনশীল প্রশ্ন যেহেতু একটি বিশেষ ধরনের পরীক্ষাপদ্ধতি, তাই এর উত্তর লেখার কৌশলও বিশেষ ধরনের হতে হবে। যেখানে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য বা অপ্রাসঙ্গিক কিছু লিখে বাহুল্য দোষ ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই; বরং প্রশ্নের উত্তর হবে সুনির্দিষ্ট, পরিমিত ও প্রাসঙ্গিক। যেমন আলোচ্য উদ্দীপকের আলোকে প্রশ্নের ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’, ‘ঘ’ এ চারটি অংশের সঠিক উত্তর কীভাবে লিখবে, তা নিচের আলোচনা থেকে দেখে নাও।

  • ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?

তার উত্তরে তোমরা হয়তো লিখবে—‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। কিন্তু এ উত্তর আমরা ‘মাত্রাবৃত্ত’ এই একটিমাত্র শব্দেও দিতে পারি। একটি পূর্ণ বাক্য লেখার দরকার নেই। তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা প্রায় ৫টি শব্দ লেখার সময় বাঁচাতে পারি। এভাবে ৭টি সৃজনশীলের জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরে অনেকগুলো শব্দ লেখার সময় বাঁচানো যায়। পূর্ণ বাক্য না লিখলেও তুমি এখানে পূর্ণ ১ নম্বরই পাবে। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জ্ঞানমূলক প্রশ্নে যে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, সেটার বানান ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে এবং ‘শূন্য’ পাবে।

  • খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

‘তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা’—বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

এর মধ্যে একটি নম্বর জ্ঞানের জন্য আরেকটি নম্বর অনুধাবনের জন্য। তাই আমরা জ্ঞান অংশের জন্য লিখতে পারি—‘তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা’ বলতে চারপাশের নানা অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-বঞ্চনা, উৎপীড়ন-নিপীড়ন, সামাজিক অনাচার-বৈষম্য ইত্যাদি দেখে সংবেদনশীল তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভূত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে।

এরপর অনুধাবন অংশে ব্যাখ্যা করব যে সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি কারণে কোনো দেশে দুঃশাসন চলতে থাকলে ক্রমেই সেখানে অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্য দেখা দেয়। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এই অভিঘাত এসে লাগে তরুণের তাজা প্রাণে। যেহেতু আঠারো বছর বয়সে তরুণ-তরুণীরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল হয়ে থাকেন, তাই মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, বৈষম্য, শোষণ ও বঞ্চনা তরুণদের মর্মাহত করে। তাঁরা কোনোভাবেই সেসব নেতিবাচকতা মানতে পারেন না। তাই এর প্রতিবাদে তাঁদের তাজা প্রাণে যন্ত্রণা অনুভূত হয়।

তুমি ইচ্ছা করলে জ্ঞানমূলক অংশের উত্তর আগে, অনুধাবনমূলক উত্তর পরে অথবা অনুধাবনমূলকের উত্তর আগে জ্ঞানমূলকের উত্তর পরে লিখতে পার।

জ্ঞানমূলকের উত্তর আগে লিখে অনুধাবনের উত্তর পরে লেখাই সবচেয়ে ভালো। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর এক প্যারাতে লেখা যায়, আবার দুই প্যারাতেও লেখা যায়। তবে দুই প্যারাতে লেখার চেষ্টা করবে। আর অনুধাবনমূলক প্রশ্নের শুরুতে অযথা কবি বা সাহিত্যিককে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করার দরকার নেই। মনে রাখতে হবে, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর হবে ‘জিরো ফ্যাট’, অর্থাৎ চর্বিশূন্য। শুধু অনুধাবনে নয়, কোনোক্রমে কোনো প্রশ্নের উত্তরে অপ্রাসঙ্গিক কথা, অপ্রয়োজনীয় তথ্য বা বাহুল্য দোষ করা যাবে না। এ জন্য ‘খ’ অংশ অর্থাৎ অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে বোর্ড বলেছে—সর্বোচ্চ ৫টি বাক্যে উত্তর লেখা যেতে পারে।

  • গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্ন

উদ্দীপকের আজাদের মধ্যে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যের যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।

মোট নম্বর ৩। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে, ১ নম্বর প্রয়োগে। তাই প্রয়োগমূলকের উত্তর তিন প্যারায় করাই ভালো। প্রয়োগ মানে আমরা জানি, শিক্ষার্থী তার পাঠ্যবই থেকে যা জেনেছে, যা বুঝেছে, তা নতুন ক্ষেত্রে অর্থাৎ উদ্দীপকে প্রয়োগ করবে। কাজেই উদ্দীপকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গল্প/কবিতার যে দিকটির সাদৃশ্য/বৈসাদৃশ্য থাকে, সেটাই জ্ঞান। ওই দিক একটি শব্দে বা বাক্যে লিখতে পারলেই ১ নম্বর। যেমন আলোচ্য প্রশ্নের জ্ঞান হলো—‘দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে আত্মদান’। তবে এ তথ্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমার্থক শব্দ দিয়েও লিখতে পারে। যেমন—অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা প্রতিবাদী সত্তার জাগরণ বা রক্তদানের পুণ্য ইত্যাদি। তারপর ওই দিক পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করাই হলো অনুধাবন।

দ্বিতীয় প্যারায় আমরা লিখব ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কিশোর বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। তার মধে৵ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক হলো দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে আত্মদান। শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরশীলতা থেকে যৌবনের আত্মনির্ভরশীলতার পথে পা দিয়েই তরুণেরা উপলব্ধি করে যে যুগে যুগে, দেশে দেশে মানুষের চিরায়ত কল্যাণের জন্য রক্তদানের প্রয়োজন হয়। সময়ের প্রয়োজনে তখন তরুণ প্রজন্ম বাষ্পের বেগে স্টিমারের গতির মতো আত্মদানের পথে ছুটে চলে এবং অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করে দেয়। তরুণেরা শুধু যে দেশ-জাতির কল্যাণে আত্মদানই করে তা নয়, বরং দেশ ও জাতির শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করে নতুন নতুন শপথে বলীয়ান হয়। কবির ভাষায়—

‘এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য

বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,

প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য

সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।’

আর শেষে ওই দিকটি (দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে আত্মদান) উদ্দীপকে কীভাবে ফুটে উঠেছে, তা বর্ণনা করাই প্রয়োগ। অর্থাৎ উদ্দীপকের আজাদ কীভাবে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, সে প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করাই প্রয়োগ। উচ্চশিক্ষিত যুবক আজাদ চাইলেই ভালো চাকরি বা ভালো কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারতেন। নিজের জীবনকে নিজের মতো গড়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি ১৯৭১ সালে পুরো দেশে সংঘটিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা, বর্বরতা, হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে মুক্তিবাহিনীর ‘ক্র্যাক প্লাটুন’-এ যোগ দিয়ে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও সহযোদ্ধাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ‘এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য’ এই চরণের বা দর্শনের সারবত্তা। অবশেষে চিরতরে নিখোঁজ হন আজাদ।

অতএব ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের আজাদের মধ্যে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তারুণ্যের দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে আত্মদানের বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে। তাহলে পূর্ণ ৩ নম্বরই পাওয়া যাবে।

‘গ’ অংশ বা প্রয়োগমূলক সম্পর্কে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, এর উত্তর ১২ বাক্যের মধ্যে শেষ করা যেতে পারে।

  • ঘ. উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্ন

উক্ত বৈশিষ্ট্যই ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার একমাত্র দিক নয়—মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই করো।

এ ক্ষেত্রে মোট নম্বর ৪। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে, ১ নম্বর প্রয়োগে এবং ১ নম্বর উচ্চতর দক্ষতায়। আমরা জানি, উচ্চতর দক্ষতা মানেই একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। প্রশ্নেই সাধারণত একটি অনুসিদ্ধান্ত দেওয়া থাকে। যদি সিদ্ধান্তটি ঠিক হয়, তাহলে সেটিকেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে, উদ্দীপকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করতে হবে যে সিদ্ধান্তটি ঠিক। আর যদি সিদ্ধান্তটি ভুল হয়, তাহলে কেন ভুল, সেটিও প্রমাণ করতে হবে। অনেক সময় সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উদ্দীপকের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের যে অংশটুকুর মিল আছে, তা বর্ণনা করে যে যে ক্ষেত্রে মিল নেই, সেগুলোও বর্ণনা করতে হবে এবং সবশেষে সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে বক্তব্যটি বা সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিচার-বিশ্লেষণ-সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার নামই উচ্চতর দক্ষতা। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নটি ভালোভাবে পড়ে পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে হবে। প্রশ্ন বুঝতে ভুল হলে পুরো ৪ নম্বরে ০ পাবে। যেমন আলোচ্য প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে উক্ত বৈশিষ্ট্যই ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার একমাত্র দিক নয়—মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই করো।

প্রথমেই আমরা জ্ঞান অংশে বলব যে উক্ত বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে তরুণদের আত্মদানের দিকটি কবিতার একমাত্র দিক নয়—মন্তব্যটি সত্য। কারণ, ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাই, এখানে পরনির্ভরশীলতা থেকে আত্মনির্ভরশীলতার পথে পদার্পণের মুহূর্তে তরুণদের মনে বিভিন্ন দুঃসাহসিক ভাবনাচিন্তার উদ্ভব হওয়া, পারিপার্শ্বিক নেতিবাচকতার প্রভাবে তরুণ প্রাণে যন্ত্রণা অনুভূত হওয়া, সংবেদনশীল মনে বহু বিচিত্র মত ও পথের ছোঁয়া লাগা, নেতিবাচকতার প্রভাবে তরুণদের বিপর্যস্ত হওয়া এবং দেশ-জাতির কল্যাণে আঠারোর প্রয়োজনীয়তার দিকগুলোও রয়েছে।

এরপর অনুধাবন অংশে কবিতার অন্যান্য দিক (উদ্দীপকের সঙ্গে ভাবগত মিল নেই যেসব দিক) সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করব। আমরা লিখতে পারি এভাবে—‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আমরা দেখতে পাই, আঠারো বছর বয়সকে তথা যৌবনের পদার্পণের মুহূর্তটিকে তরুণদের কাছে ‘দুঃসহ’ মনে হয়। কারণ, এ সময় তারা শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরশীলতা পেরিয়ে যৌবনের আত্মনির্ভরশীলতার পথে পা বাড়ায়। কিন্তু তরুণ প্রাণ অসীম সাহসিকতার সঙ্গে আঠারো বছর বয়সের আত্মনির্ভরশীলতার ঝুঁকি গ্রহণ করে, তা ছাড়া আঠারো বছর বয়সে বহু বিচিত্র চিন্তাচেতনা, স্বপ্ন-কল্পনা ইত্যাদি উঁকি দেয় তরুণদের মনে। অন্যদিকে সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইত্যাদি কারণে কোনো দেশে দুঃশাসন চলতে থাকলে ক্রমশ সেখানে অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য দেখা দেয়। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এই অভিঘাত এসে লাগে তরুণের তাজা প্রাণে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ-বৈষম্য-শোষণ-বঞ্চনা তরুণদের মর্মাহত করে। আঠারো বছর বয়সে যেহেতু জগৎ ও জীবনের বহু বিচিত্র মতো ও পথ তরুণ প্রজন্মের সামনে উন্মোচিত হয়, তাই এ বয়সে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। ভুল পথের নানা চাকচিক্য তরুণদের আকৃষ্ট করে অন্ধকার জগতে নিয়ে যেতে পারে। ফলে তাদের জীবনে নেমে আসতে পারে ঘোর অমানিশা। কবির ভাষায়—
‘এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে

এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরথর।’

সবশেষে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়সের বিভিন্ন ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রবণতা তুলে ধরে ইতিবাচকতার জয়গান গেয়েছেন। দেশ-জাতির ক্রান্তিকালে আঠারো বছর বয়সের আগমন প্রত্যাশা করেছেন।

এরপর প্রয়োগের প্যারায় আমরা উদ্দীপকের আজাদ কীভাবে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, সে প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করব।

সবশেষে উচ্চতর দক্ষতার প্যারায় আমরা তুলনামূলক আলোচনা করে দেখাব যে আঠারো বছর বয়সে তরুণ-তরুণীরা জানে, দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণে আত্মদানের মধ্যেই মানবজীবনের সার্থকতা। তাই তো তাঁরা সব ভয়, ডর, শঙ্কার ঊর্ধ্বে উঠে, সব বাধা-বিপত্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করে অসীম সাহসিকতায় বাষ্পের বেগে, স্টিমারের গতির মতো আত্মদানের পথে ছুটে চলে এবং অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করে। উদ্দীপকের আজাদ যে কাজটি করেছেন। কিন্তু এর বাইরেও কবিতায় আরও বেশ কিছু দিক রয়েছে, যেমন পরনির্ভরশীলতা থেকে আত্মনির্ভরশীলতার পথে পদার্পণের মুহূর্তে তরুণদের মনে বিভিন্ন দুঃসাহসিক ভাবনাচিন্তার উদ্ভব হওয়া, পারিপার্শ্বিক নেতিবাচকতার প্রভাবে তরুণ প্রাণে যন্ত্রণা অনুভূত হওয়া, সংবেদনশীল মনে বহু বিচিত্র মত ও পথের ছোঁয়া লাগা, নেতিবাচকতার প্রভাবে তরুণদের বিপর্যস্ত হওয়া এবং দেশ-জাতির কল্যাণে আঠারোর প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি। এই দিকগুলো উদ্দীপকে ফুটে ওঠেনি।

কাজেই ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, উক্ত বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে তরুণদের আত্মদানের দিকটি কবিতার একমাত্র দিক নয়—মন্তব্যটি সত্য।

‘ঘ’ অংশ বা উচ্চতর দক্ষতামূলক সম্পর্কে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৫ বাক্যের মধ্যে উত্তর লেখা যেতে পারে।

প্রিয় পরীক্ষার্থী, আমার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের কারণে তোমার কাছে উত্তর অনেক বড় মনে হতে পারে, কিন্তু তুমি যখন লিখবে, তখন ঠিকই উত্তরের পরিসর ছোট হয়ে যাবে। ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে ৭টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে লেখা আসলেই কঠিন ব্যাপার। তারপরও তোমাদের লিখতে হবে, তোমরা সবাই লিখে থাকো। কারণ, আঠারো বছর বয়সের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো তো আছে তোমাদের মধ্যেও, তাই তো সম্ভব হয়। ওপরের দিকনির্দেশনাগুলো মনে রাখলে বাংলা ১ম পত্রে অবশ্যই তোমরা ভালো নম্বর পাবে।

*লেখক: মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, প্রভাষক, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা।সূত্রঃপ্রথমআলো

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট