বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম উপসর্গ আর জটিলতা নিত্যসঙ্গী হয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা হলো হাঁটুব্যথা। ৬০ বছরের পর প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষই হাঁটুব্যথায় ভোগেন। শরীরের ওজন বহন করা ছাড়াও হাঁটার জন্য এই জয়েন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাই যে কারণেই হাঁটুতে ব্যথা হোক না কেন, এতে দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হয় মারাত্মকভাবে। বয়স হলে কেন হাঁটুতে ব্যথা হয় এবং করণীয় কী, তা জেনে নিন।
১. বয়স্কদের হাঁটুব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বয়সজনিত বাত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয় হতে থাকে, জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির মধ্যে যে তরল থাকে, তা কমতে থাকে, ফলে আরও বেশি হাড় ক্ষয় হয় এবং হাঁটুর গঠনে পরিবর্তন আসে। যাঁদের ওজন একটু বেশি, তাঁদের হাঁটুতে আরও বেশি চাপ পড়ে, ফলে ব্যথা হয়।
২. অস্টিওআর্থ্রাইটিস ছাড়াও অন্যান্য ধরনের বাত হাঁটুব্যথার কারণ। যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস, গাউট, সিউডোগাউট, সেরোনেগেটিভ আর্থ্রাইটিস।
৩. হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বা সেপটিক আর্থ্রাইটিস ব্যথার একটি বড় কারণ। এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি ব্যথা হয় এবং জয়েন্ট ফুলে লাল হয়ে যায়।
৪. হাঁটুব্যথার আরেকটি বড় কারণ হলো আঘাত। যেকোনো ধরনের আঘাতে হাঁটুর হাড় ভেঙে গেলে, লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে, কার্টিলেজে আঘাত লাগলে, এমনকি কোমর বা পায়ে আঘাত লাগলেও হাঁটুতে ব্যথা হয়।
৫. পায়ের মাংসপেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়লেও ব্যথা হয়। সিঁড়ি দিয়ে অনেক ওঠানামা করলে হাঁটু বারবার বাঁকাতে বা সোজা করতে হয়, ফলে ব্যথা হয়। এ ছাড়া দ্রুত দৌড়ালে, পাহাড়ে উঠলে কিংবা অনেকক্ষণ বসে থাকলেও বয়স্কদের হাঁটুব্যথা হয়।
৬. আরেকটি বিরল কিন্তু মারাত্মক কারণ হলো হাড়ের ক্যানসার। শরীরের অন্য কোনো জায়গা থেকে হাড়ে ক্যানসার ছড়ালে, বিশেষ করে রক্তের ক্যানসার হলে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে।
করণীয় কী
কী কারণে, কত দিন ধরে ব্যথা হচ্ছে, তার ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। ব্যথাটা যদি ছয় সপ্তাহের কম সময়ে শুরু হয়, তাহলে একে বলা হয় অ্যাকিউট পেইন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত কারণ সেপটিক আর্থ্রাইটিস ও আঘাতজনিত ব্যথা। সেপটিক আর্থ্রাইটিসে খুব দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। আর ছয় সপ্তাহের বেশি সময় হলে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে ব্যথা হতে পারে। অস্টিওআর্থ্রাইটিসের জন্য জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যথা কমানোর জন্য মানতে হবে কিছু নিয়মকানুন।
১. নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। হাঁটুতে ব্যথা হলেও নিয়মিত হাঁটতে হবে। কমপক্ষে ছয় হাজার কদম। প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ৩০–৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। এতে পায়ের মাংসপেশি, লিগামেন্ট, হাড় কার্যকর থাকবে। কিন্তু হাঁটতে হবে সমতল জায়গায়, উঁচু–নিচু স্থান হাঁটার জন্য ভালো নয়। এমনকি বাসায় ট্রেডমিলে হাঁটাও ঠিক হবে না। দ্রুত দৌড়ানো বা সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করা যাবে না।
২. শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে, যেমন তাই চি একধরনের ব্যায়াম, যা মাংসপেশিকে দৃঢ় করতে ও শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ইয়োগা বা যোগব্যায়াম হাঁটুব্যথায় খুব বেশি উপকারী নয়।
৩. বাড়তি ওজন থাকলে কমাতে হবে।
৪. ব্যথা কমাতে আইস প্যাক বেশ উপকারী। প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর ১৫ মিনিট করে আইস প্যাক দিলে ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়। তবে বরফ সরাসরি পায়ে দেওয়া যাবে না। একটা পাতলা কাপড়ে মুড়িয়ে দিতে হবে।
৫. ব্যথানাশক ক্রিম বা মলম লাগানো যায়, তাতে যদি ব্যথা না কমে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথার ওষুধ খেতে হবে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
১. হাঁটুব্যথার সঙ্গে যদি জ্বর থাকে।
২. হাঁটু লাল হয়ে ফুলে গেলে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হলে।
৩. হাঁটু যদি কোনো ওজন নিতে না পারেন।