বাজারে আম,জাম,লিচু, কাঁঠালসহ নানা ফলের সমারোহ। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের এসব ফল খেতে হলে কিছু বিধিনিষেধ মানতে হবে। মেনে চলতে হবে কিছু নিয়মও।
অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন বাড়িতে ডায়াবেটিকের রোগীকে ফল খেতে দেবেন কি না। আসুন জেনে নিই একজন ডায়াবেটিক রোগী প্রতিদিন কোন ফল কতটুকু খেতে পারবেন।
আম
কার্বোহাইড্রেট হিসেবে ডায়াবেটিক রোগীদের প্রতিদিন ১৩০ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। এ জন্য রক্তে সুগার পরীক্ষা করে ফল পরিমাণমতো খেতে হবে।
প্রতিটি খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক ও গ্লাইসেমিক লোড থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এ জন্য যেসব খাবারে গ্লাইসেমিক সূচক ৫৫ আর গ্লাইসেমিক লোড ১০–এর নিচে, সেসব খাবার খাওয়া ডায়াবেটিক রোগীর জন্য নিরাপদ। আমের গ্লাইসেমিক সূচক ৫৬, যেটাকে বলা হয় মাঝারি গ্লাইসেমিক সূচক। গ্লাইমেসিক লোডও কম। তাই সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিক রোগীরা পরিমিত পরিমাণে আম খেতে পারবেন।
আম ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (বি–১২ বাদে), ভিটামিন সি ও পলিফেনলসমৃদ্ধ। এ ছাড়া আমে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত আম খেলে ওজন বাড়তে পারে। যাঁদের সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে, তাঁরা ছোট আম পুরোটা বা বড় আমের অর্ধেক কেটে ছোট টুকরা করে খেতে পারবেন। তবে যাঁদের সুগার নিয়ন্ত্রণে নেই, তাঁদের জন্য আম এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
তরমুজ
গরমে পানির ঘাটতি ও ইলেকট্রোলাইটসের চাহিদা পূরণে তরমুজ খুব ভালো একটি উৎস। তরমুজে পানির পরিমাণ ৯২ শতাংশ এবং পটাশিয়াম ১১২ মিলিগ্রাম। তবে তরমুজে গ্লাইসেমিক সূচক ৭৬, মানে উচ্চমাত্রার। কিন্তু তরমুজের গ্লাইসেমিক লোড ২। যেসব ডায়াবেটিক রোগীর সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে, তাঁরা প্রতিদিন ১৫০-২০০ গ্রাম করে তরমুজ খেতে পারবেন। তবে যাঁদের সুগার নিয়ন্ত্রণে নেই, তাঁদের চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। তরমুজ খেতে পারবেন মধ্য-সকাল বা ব্যায়ামের পর। তবে মূল খাবারের সঙ্গে কখনোই তরমুজ খাওয়া উচিত নয়।
লিচু
লিচুতে দুটি অ্যান্টি–অক্সিজেন্ট যৌগ রয়েছে, যা এই গরমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। লিচুর গ্লাইসেমিক সূচক ৫০, আর গ্লাইসেমিক লোড ৭ দশমিক ৬, যা ডায়াবেটিক রোগীর জন্য নিরাপদ। ডায়াবেটিক রোগীদের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রতিদিন ৪০ গ্রাম লিচু অর্থাৎ বড় ছয়টি করে লিচু খেতে পারবেন। এ ছাড়া রক্তে সুগারের মাত্রা ও শর্করার মাত্রার ওপর ভিত্তি করে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে লিচু খেতে পারেন। তবে খালি পেটে লিচু খেলে সুগার কমে যেতে পারে। আর ঘুমানোর আগে ফল খাওয়া উচিত নয়।
লিনা আকতার, পুষ্টিবিদ, ঠাকুরগাঁও ডায়াবেটিক ও স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল।সূত্রঃপ্রথমআলো