রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি চীনে তৈরি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) আজ সোমবার বিমান বিধ্বস্তের পর জানিয়েছে, বিমানটির মডেল ছিল এফটি-৭ বিজিআই। এটি বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলার বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এ ঘটনায় অন্তত ২০ জনের মৃত্যু ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন। নিহত ও আহতদের বেশির ভাগ শিশু ও মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী।
যুদ্ধবিমান চালানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত দুজন কর্মকর্তা আমাদেরকে জানিয়েছেন, যেটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেটি দিয়ে প্রশিক্ষণের পর পাইলটদের মূল যুদ্ধবিমান চালাতে দেওয়া হয়।
সামরিক সরঞ্জাম-সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট গ্লোবাল সিকিউরিটিডটকমের তথ্য অনুযায়ী, এফটি-৭ বিজিআই মডেলের বিমানের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন। এটি স্বল্প খরচে নির্মিত, এক ইঞ্জিনচালিত ও দুই আসনবিশিষ্ট একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। মূল সংস্করণ এফ-৭ এর জন্য পাইলটদের প্রস্তুত করতে এফটি-৭ বিজিআইয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ এসব যুদ্ধবিমান কবে কিনেছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। তবে বিমানবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদেরকে বলেন, এফটি-৭ বিজিআই সংস্করণটি বাংলাদেশ ২০১৩ সালে চীন থেকে কিনেছে।
গ্লোবাল সিকিউরিটিডটকমের ওয়েবসাইটে এই যুদ্ধবিমান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। তারা জানায়, চীন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এফ-৭ যুদ্ধবিমান তৈরি করে। ১৯৬৫ সালের নভেম্বরে এফ-৭-এর কাঠামোগত পরীক্ষা সফলভাবে শেষ হয়। ১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে এর সফল পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করেন চীনা বৈমানিকেরা। ১৯৬৭ সালের জুনে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এটিকে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
পিএলএর নানামুখী চাহিদার ভিত্তিতে এফ-৭-এর বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংস্করণ তৈরি করে চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন। এর কয়েকটি হলো এফ-৭ ই, এফ-৭ পি, এফ-৭ এম, এফ-৭ বিজিআই। গ্লোবাল সিকিউরিটিডটকমের তথ্য বলছে, বিশ্বে এখন সবচেয়ে বেশি এফ-৭ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে পাকিস্তান। তাদের বহরে বর্তমানে ১২০টি এফ-৭ যুদ্ধবিমান আছে।
নিউইয়র্কভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষাবিষয়ক ওয়েবসাইট এয়ারফোর্স টেকনোলজির তথ্য অনুযায়ী, ইরান, ইরাক, আলবেনিয়া, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও মিসরের এ যুদ্ধবিমান রয়েছে। ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ যুদ্ধবিমানের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দেশে এর আগে একাধিকবার প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানটির পাইলট উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ নিহত হন। ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে প্রশিক্ষণের সময় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাশিয়ায় নির্মিত ইয়াক-১৩০ মডেলের দুটি বিমান বিধ্বস্ত হলেও চারজন বৈমানিক নিরাপদে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।
এর আগে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তামান্না রহমান নামের এক পাইলট নিহত হন।
বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ যুদ্ধবিমান মিগ-২১ চালিয়েছেন। তিনি বলেন, একটা যুদ্ধবিমানের কার্যকাল থাকে ১০ থেকে ১২ বছর। আবার দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকলেও বিমানে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, এখানে ঠিক কী হয়েছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটা তদন্ত শেষে বের করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন তিনি।তথ্যসূত্রঃপ্রথমআলো